
নেপাল ও দার্জিলিংয়ের ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে ৬৭ জনের মৃত্যু। উজানের পানি নেমে আসায় বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত দুই দিনের ভয়াবহ ও লাগাতার বর্ষণের কারণে নেপাল ও ভারতের দার্জিলিং এলাকায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। বন্যায় বহু মানুষ নিখোঁজ, শতাধিক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢল নামায় নেপাল ও ভারতের উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকা প্রায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
🌊 পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসছে বাংলাদেশে
নেপাল ও দার্জিলিং হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদনদীর উজান অঞ্চল। ফলে এই এলাকার অতিবৃষ্টির পানি দ্রুত বাংলাদেশে নেমে আসে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা, আত্রাই, ও করতোয়া নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষ করে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর ও রাজশাহী বিভাগের নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে, এবং আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
🏠 নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে
রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বেশ কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করছে। অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।
একজন স্থানীয় কৃষক বলেন,
“গতকাল পর্যন্ত পানি উঠছিল একটু একটু করে। আজ সকালে দেখি উঠানে হাঁটু পানি। ধানক্ষেতও তলিয়ে যাচ্ছে।”
এই হঠাৎ পানিবৃদ্ধির কারণে কৃষিক্ষেত্রেও বড় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে আমন মৌসুমের ধান চাষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
⚠️ প্রশাসনের সতর্কতা ও প্রস্তুতি
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উজানের ঢল থেকে আসা পানির পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রংপুর, লালমনিরহাট ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সতর্ক থাকতে ও গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে উদ্ধার কার্যক্রমে যুক্ত করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
🧭 আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন নেপাল ও দার্জিলিং অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আরও পানি বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন থেকে অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে পারে। তাই নদীর তীরবর্তী মানুষদের প্রস্তুত থাকতে হবে এবং নিয়মিত আবহাওয়া ও নদীর পানি পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর রাখতে হবে।
💬 বিশেষজ্ঞের মতামত
পরিবেশ বিশ্লেষক ড. মাহমুদ হাসান বলেন,
“হিমালয় অঞ্চলে অতিবৃষ্টি হলে বাংলাদেশে প্রভাব পড়বেই। নেপাল ও দার্জিলিংয়ের বৃষ্টির পানি দ্রুত তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র হয়ে উত্তরাঞ্চলে নেমে আসে। তাই আগাম প্রস্তুতি খুবই জরুরি।”
তিনি আরও বলেন,
“বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক রাখা, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা ও জনগণকে তথ্য দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
🌱 ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ হয়নি
যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করা হয়নি, তবুও অনুমান করা হচ্ছে—নেপাল ও দার্জিলিংয়ের বন্যা ও ভূমিধসে হাজারো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও বন্যার কারণে হাজারো একর জমি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
🙏 জনগণের প্রতি আহ্বান
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো জনগণকে অনুরোধ করেছে—
-
নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীরা যেন এখনই প্রস্তুতি নেয়।
-
শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপদ স্থানে রাখা হয়।
-
স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা নিয়মিত অনুসরণ করা হয়।
এখন কি রংপুরে বন্যা হবে?
বর্তমান তথ্য অনুযায়ী নেপাল ও দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি ঢলের পানি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম এলাকায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা বন্যার ঝুঁকি অনেক বেশি।
তিস্তা নদীর পানি এখন কেমন চলছে?
তিস্তা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে ঢল নামতে থাকায় আগামী এক-দুই দিনে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকা যেমন—গঙ্গাচড়া, হাতীবান্ধা, ডিমলা ও কুড়িগ্রাম সদর—এই মুহূর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
নেপাল ও দার্জিলিংয়ে বন্যায় কত মানুষ মারা গেছে?
এখন পর্যন্ত সরকারি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নেপাল ও দার্জিলিংয়ে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ আছেন, এবং উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে।